আল্লাহর রহমতই পরকালে মুমিনের সম্বল-২
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
আল্লাহপাক রাহমানুর রাহীম। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। কিন্তু তিনি কাকে ক্ষমা করবেন? কতটুকু অপরাধ ক্ষমা করবেন? কতবার ক্ষমা করবেন? কতক্ষণ ক্ষমা করবেন? এসবের উত্তরে এক কথায় বলা যায়Ñ অপরাধ যত বড়ই হোক, অপরাধী যদি তওবা করে এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। এক্ষেত্রে কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। শর্ত একটাইÑ আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা। তাহলেই তিনি ক্ষমা করবেন। অপরাধের ধরন যত জঘন্যই হোক, পরিমাণ যত বেশিই হোক- এগুলো কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়।
কুরআনে কারিমে কত রকম পাপের শাস্তির কথা বলা হয়েছে! কোথাও শাস্তির পরিমাণ নির্ধারিত! আবার কোথাও শুধু বলা হয়েছেÑ ‘মহাশাস্তি’র কথা, কিংবা ‘যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’র কথা। শাস্তির কথা বলে বলেও আবার রহমতের কথা বলেছেন। আশার বাণী শুনিয়েছেন। অপরাধ যত জঘন্যই হোক, খাঁটি মনে তওবা করলে তা কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এই যে দেখুন, খ্রিস্টানরা কখনো হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর ছেলে বলে থাকে, কখনো বা ‘খোদা’ই বলে বসে। তাদের এই ধৃষ্টতা কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে। সেই বর্ণনার পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে স্বীয় রহমতের দিকে আহ্বান করেছেন এভাবেÑ ‘তারা কি আল্লাহর কাছে তওবা করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সূরা মায়িদা, ৭৪)
ফেরাউন তো নিজেকে খোদা বলেই দাবি করে বসেছিল! তার ঘটনাও পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে বর্ণিত হয়েছে। অথচ এই ভ- স্বঘোষিত খোদাকেও পরম করুণাময় আল্লাহ রহমতের দিকে ডেকেছেন। বিশেষ হেদায়েত ও নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাঁর নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে এ ‘নকল’ খোদার কাছে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের একটি সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতিÑ ‘ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। এবং বলো, তোমার কি আগ্রহ আছে যে তুমি পবিত্র হও আর আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথপ্রদর্শন করি, যেন তুমি তাকে ভয় কর? অতঃপর সে তাকে মহানিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং অবাধ্য হলো। এরপর সে পেছনে ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হলো। সকলকে সমবেত করে উচ্চস্বরে সে ঘোষণা করে বলল : আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক!’ (সূরা নাযিয়াত, ১৭-২৪)
মিথ্যা প্রভুত্বের দাবিদার যে ব্যক্তি, তার জন্যও উন্মোচিত আসল প্রভুর রহমতের দুয়ার! এমন প্রভুর কাছে তো আশা করাই যায়। কত সুস্পষ্ট তাঁর ঘোষণাÑ ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। সন্দেহ নেই, আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা যুমার, ৫৩)
আল্লাহ তাআলার রহমত যে কত ব্যাপক- তা কল্পনা করার জন্যে একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগ করেছেন। নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন নিরানব্বই ভাগ। একভাগ পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে। সেই এক ভাগের কারণেই পুরো সৃষ্টিজগত পরস্পরকে দয়া করে। এমনকি ঘোড়াও তার পা উঁচু করে রাখে যেন তার বাচ্চা কোনো কিছুতে আক্রান্ত না হয়। (সহীহ বুখারী : ৬০০০)
এবার তাঁর রহমতের ভিন্ন একটি দিক লক্ষ্য করুন। তিনি আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছেন- একথা কুরআনেও বলা হয়েছে। আবার সৃষ্টিগতভাবে তিনি আমাদের মাঝে কিছু বন্ধন জুড়ে দিয়েছেন। মানবিকতার টানেই আমরা সেই বন্ধন রক্ষা করি। জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে আমরা তাঁর ইবাদত করি। আমরা আমাদের শুধুই ইবাদত দিয়ে বেহেশতে যেতে পারব না ঠিক, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে আমাদের ইবাদতের সওয়াবকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেখুন- শবে কদরের একটি মাত্র রাত ইবাদতে কাটালে হাজার মাসেরও বেশি ইবাদতে কাটানোর সওয়াব পাওয়া যায়; জামাতে নামায পড়লে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব মেলে; মসজিদে হারামে এক রাকাত নামায পড়লে এর সওয়াব বেড়ে যায় এক লক্ষ গুণ ইত্যাদি।
বলেছিলাম, আমরা আমাদের সুখময় ও সমৃদ্ধ পরকাল নির্মাণের জন্যে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী। আমরা আশা করি, তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের সামান্য নেক আমলটুকু কবুল করে নেবেন। এগুলো ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নিজ দয়ায় তিনি ত্রুটিগুলো মুছে দিয়ে আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। এ আশা পোষণ করা ঈমানের দাবি।
তবে মনে রাখতে হবে, নিজের সাধ্যটুকু বিলিয়ে দিয়ে আশা পোষণ করতে হবে। বীজ বপন না করে চারাগাছের আশা করা যেমন নির্বুদ্ধিতা, তেমনি নেক আমল না করে এবং গোনাহ ছেড়ে তওবা না করে পরকালীন মুক্তির জন্যে আল্লাহপাকের রহমতের আশায় বসে থাকাও তেমনি বোকামি। আর আশা যদি হয় তওবার দরজা পেরিয়ে নেক আমলকে সঙ্গে নিয়ে, তাহলে সে আশাই পরকালের সফরে মুমিনের সম্বল।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শেখ
চট্টগ্রামে মাসব্যাপী ফুল উৎসব শুরু
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৮০ বিদেশিসহ ছয় হাজার বন্দীকে মুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমার
শ্রীপুরে মাদক ব্যবসায়ী মায়ের সাথে জেলে গেল ৭ মাসের শিশু সাওদা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন মঙ্গলবার উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি
রূপপুরে ভবন থেকে লাফিয়ে রুশ নারীর মৃত্যু
সিডনিতে বোলারদের দিনে বুমরাহকে নিয়ে শঙ্কা
কমলনগরে বিএনপি নেতার হামলায় মাদ্রাসার পরিচালকসহ আহত-২
শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতেই হবে- এহসানুল হক মিলন
সালথা উপজেলা আ'লীগের সহ-সভাপতি সাহিদুজ্জামান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
তাসকিনকে নিয়ে সাবধানী ছিলেন উসমান
মাটি, কৃষি ও দেশ বাঁচান শ্লোগানে কৃষকদের কৃষি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেমিনার
আমরা কি সুন্দর তাই না?
ইথিওপিয়ায় ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ,আতঙ্কে জনজীবন
দেবহাটায় তিনটি বিদেশি পিস্তল -গুলিসহ একজন আটক
হরিরামপুরে নাশকতা মামলার আসামী দিনমজুর কাঠমিস্ত্রির নিত্য সরকারের কারাগারে মৃত্যু
টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তার উপরেই বিদ্যুতের খুঁটি!
চীনে চাকরির বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে
রাজবাড়ীতে এফিডেভিট এর ফাঁদে বাল্য বিয়ে
বিয়ে এখনও হয়নি,কেবল ছবি তোলা হয়েছে: তাহসান খান